যশোরে জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয় ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং জাতীয় পার্টির কার্যালয় অপসারণের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শনিবার বিকেলে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে তারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন।
শনিবার বিকেলে যশোর শহরের চৌরাস্ত থেকে গণঅধিকার পরিষদের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি গাড়িখানা রোড, দড়াটানা ঘুরে গোহাটা রোডের জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে।
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা গোহাটা রোডের গলির মুখে সড়কের উপর অবস্থান নেন। সেখানেই তারা এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন এবং জেলা থেকে জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন।
সমাবেশে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল বলেন, “বিগত সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের গুম, খুন ও লুটপাটে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। সরকার তাদের রক্ষা করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। যদি আওয়ামী লীগ হত্যাযজ্ঞের কারণে নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে একই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয় সরিয়ে নিতে হবে। কার্যালয়ের সামনে থাকা দলীয় ব্যানার ও ফেস্টুন খুলে ফেলতে হবে। এর পরও যদি কার্যালয় অপসারণ না হয়, তাহলে সংঘর্ষ, ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ ঘটলে এর দায় গণঅধিকার পরিষদ নেবে না।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির যশোর জেলা প্রধান সংগঠক নুরুজ্জামান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর প্রায়ই প্রতিবিপ্লবী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রুখে দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই নুরুল হক নুরের ওপর হামলা হয়েছে। যারা একসময় ফ্যাসিস্টদের সুযোগ দিয়েছিল, তাদের পরিণাম ভয়াবহ ছিল, ভবিষ্যতেও হবে। ছাত্র ও তরুণ সমাজ এ ধরনের পুনর্বাসনের চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতা শোয়াইব হোসেন বলেন, “নুরুল হক নুর একদিনে নেতা হননি। তিনি তখনও কথা বলেছেন, যখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করত না। তার ওপর হামলা মেনে নেওয়া হবে না। হামলাকারী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনতেই হবে। যদি প্রশাসন ভুলে যায় ছাত্রদের শক্তি কতটা, আমরা তা মনে করিয়ে দেব।”
বিক্ষোভে উপস্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন- “আপা গেছে যে পথে, জাপা যাবে সেই পথে,জাতীয় পার্টির ঠিকানা এই বাংলায় হবে না!”
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে প্রবেশের গলির মুখে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, “আমরা গলির মুখে অবস্থান নিইনি। কার্যালয়ের সামনে পুলিশও ছিল না। নেতাকর্মীরা নিজেরাই সড়কে বসে পড়ে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।”
আল্টিমেটামের বিষয়ে যশোর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মুফতি ফিরোজ শাহ বলেন, “জাতীয় পার্টি শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক দল। কারও ওপর হামলা করা বা দখলদারি আমাদের নীতিতে নেই। কার্যালয় অপসারণের আল্টিমেটাম কোনো গণতান্ত্রিক বক্তব্য নয়। এ ধরনের হুমকি দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।”