যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন প্রসঙ্গে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ ও যশোর-৬ আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে যুবদল এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
শনিবার বিকেলে জেলা যুবদলের উদ্যোগে শহরের লালদীঘিস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ ও সদস্য সচিব আনছারুল হক রানার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলটি আরএন রোড এলাকায় গিয়ে সমাপ্ত হয়।
বিক্ষোভ শেষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্বিন্যাসের নামে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের মতে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে যশোরের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক সম্প্রীতি এবং নির্বাচনী পরিবেশ ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে। বক্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—যশোরবাসী এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
নেতারা বলেন, সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল, যিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তার এই প্রস্তাব যশোরের ঐক্য ও সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। বক্তারা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি জেলার সাধারণ মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা যশোরের জনগণ কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করবে।
গত ৬ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর জমা দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে—প্রস্তাবিত যশোর-৬ আসনে অভয়নগর উপজেলা, মণিরামপুরের ৬টি ইউনিয়ন (ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, কুলটিয়া, দুর্বাডাঙ্গা, নেহালপুর ও মনোহরপুর) এবং কেশবপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন (সুফলাকাটি, পাঁজিয়া ও গৌরিঘোনা) অন্তর্ভুক্ত করা হবে।এর ফলে কেশবপুর উপজেলাকে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।আবার যশোর-৪ আসনে বাঘারপাড়া উপজেলাকে সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।এতে যশোর-৩ (সদর) আসনের ৫টি ইউনিয়ন বাদ পড়বে।
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের খসড়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এ ধরনের সীমানা পুনর্গঠন স্থানীয় স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। যশোরের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যাবে না।
এর প্রতিবাদে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। যুবদলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে—যদি নির্বাচন কমিশন এই পরিকল্পনা থেকে সরে না আসে, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
যশোরে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট দিন দিন নতুন মাত্রা নিচ্ছে। আসন পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে এবং প্রতিবাদ কর্মসূচির ধারা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি নির্বাচন কমিশন জনগণের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যশোরে বড় ধরনের আন্দোলনের সূত্রপাত হতে পারে।