যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এক বিশেষ আবেগ, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও জাতীয় চেতনায় ভরপুর আয়োজনে পালন করেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫। এই দিবসটি স্মরণ করে ২০২৪ সালের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে, যেখানে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। জাতিকে দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল এই বিপ্লব।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বিজয় র্যালির মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু
উৎসবমুখর পরিবেশে ৫ আগস্ট, সকাল ৯:৪৫টায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে বিশাল বিজয় র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
“জুলাই বিপ্লব ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ভাবনা” বিষয়ক সেমিনার
র্যালি শেষে একাডেমিক ভবনের গ্যালারিতে আয়োজিত হয় এক প্রাঞ্জল সেমিনার—“জুলাই বিপ্লব ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ভাবনা”। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ।তিনি বক্তব্যে বলেন,”জুলাই বিপ্লব ছিল একটি স্বপ্নের সূচনা—যেখানে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় ছিল। যবিপ্রবির প্রত্যেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীকে সে লক্ষ্যেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের কোনো ঠাঁই নেই, সবাই সমান অধিকার পাবে।”
ছাত্র-জনতার ভুমিকা ও আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে করণীয়
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন। তিনি জুলাই বিপ্লবে ছাত্র ও সাধারণ জনতার অবদান, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আগামীর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে করণীয় বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন।
চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশু-কিশোররা
সেমিনারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় কেক কাটা অনুষ্ঠান, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জুলাই বিপ্লবের শিশু-কিশোর যোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। এরপরে শুরু হয় রচনা প্রতিযোগিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা—যেখানে অংশ নেয় শতাধিক শিশু ও কিশোর।
এই আয়োজনগুলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
শ্রদ্ধা ও দোয়া: শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা
দুপুরে যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মসজিদে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বিশেষ খাবার পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গানের মাধ্যমে গানে গানে বিপ্লবের চেতনা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে যবিপ্রবির সকল হলে ছিল উন্নতমানের খাবারের আয়োজন। বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা মঞ্চে শুরু হয় জুলাই গণজাগরণ গানের অনুষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।এই গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় জুলাই বিপ্লবের আদর্শ, চেতনা এবং জাতীয় ঐক্যের বার্তা।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্যে ফুটে ওঠে ঐতিহাসিক গুরুত্ব
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ আসমা বেগম, চেয়ারম্যান, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও যবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, ড. মো. ওমর ফারুক, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য,ড. মো. রাফিউল হাসান, পরিচালক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর,ড. মো. মাসুম বিল্লাহ, চেয়ারম্যান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ,শিক্ষার্থী প্রতিনিধি: মো. ইসমাইল হোসেন, সামিউল আলিম সামি, সৈকত, ফারজানা রহমান প্রমুখ। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বিপ্লবের শিক্ষা, জাতীয় একতা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির বার্তা।