কাঁঠালের চিপস্ তৈরি করে বাজিমাত: অজপাড়া গাঁয়ের রুপা খাতুন এখন সফল নারী উদ্যোক্তা

কাঁঠালের চিপস রুপা খাতুনের সফল উদ্যোগ। মাসে ২০ হাজার আয় করছেন যশোরের এই নারী উদ্যোক্তা। সংগ্রাম থেকে সাফল্যের গল্প।

কিশোরী বয়সে থেমে যাওয়া স্বপ্ন আবার জ্বলে উঠল রান্নাঘরের চুলায়

১৯৯৬ সালে মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছিলেন রুপা খাতুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। তখনই তার বইখাতা-কলমের জীবন থেমে গিয়ে শুরু হয় সংসারের দায়িত্ব। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে কখনোই থামেননি তিনি। রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলকে সম্বল করে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নপূরণের এক নতুন দিগন্ত। যশোরের কোদালিয়া গ্রামের এই গৃহবধূ এখন পরিচিত কাঁঠালের চিপস্’কারিগর’ হিসেবে। শুধু এই চিপস থেকেই তিনি প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা।

অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা এক সাহসী নারীর পথচলা

রুপা খাতুন বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী ইখতার আলী একজন কাপড় ব্যবসায়ী এবং টেইলর মাস্টার। সংসারের চাপের মাঝেও তিনি হার মানেননি। প্রথমে সেলাই শেখেন, কিন্তু মন টানে খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত পণ্যে। ২০১৯ সাল থেকে শুরু করেন ঘরে বসেই বিভিন্ন আচার, জ্যাম, জেলি, কুমড়োর বড়ি, গুড়-পাটালিসহ নানারকম খাদ্যপণ্য তৈরি বিক্রি

মৌসুমী ফলের অপচয় ঠেকাতেই কাঁঠালের চিপস্

একদিন রুপা খাতুন লক্ষ্য করলেন, মৌসুমী ফলগুলোর অনেকটাই অপচয় হয়। বিশেষ করে কাঁঠাল। এই অপচয় রোধ ও সংরক্ষণের জন্যই তার মাথায় আসে নতুন ধারণা—কাঁঠালের চিপস্ তৈরি। এরপর তিনি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন’ ও ‘বন্ধন’ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। পরে প্রিজম এগ্রো এন্ড ফুড’ থেকে অংশ নেন অন দ্য জব ট্রেনিং-এ, যা তাকে কাঁঠালের চিপস্ তৈরিতে উৎসাহ ও দক্ষতা দিয়েছে।

চিপস্ তৈরির প্রক্রিয়া ও বিক্রি

রুপা খাতুন জানান, প্রথমে কাঁঠাল থেকে কোষ ছাড়িয়ে আঁটি ফেলে দিয়ে তা চিপসের আকৃতিতে কেটে তেলে ভাজতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় মসলা মিশিয়ে তা ২০ টাকার প্যাকেটে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন গড়ে তিনি ৩০০ প্যাকেট চিপস্ তৈরি করেন। এক কেজি কাঁঠাল থেকে হয় ১০ প্যাকেট চিপস্। এর ফলে তার মাসিক আয় দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকার বেশি

সংরক্ষণ ও মেশিনের প্রয়োজনীয়তা

রুপা খাতুন আরও জানান, কাঁঠাল প্রসেস করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে তিন মাস পর্যন্ত চিপস্ তৈরি করে বাজারজাত করা যায়। কিন্তু প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত করতে প্রয়োজন ভ্যাকুয়াম ফ্রায়ার, ডি-অয়েলিং এবং প্যাকেজিং মেশিন। তিনি চান এই যন্ত্রপাতির সহায়তায় তার উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করতে।

 ‘রেইনবো এগ্রো ফুড’: ঘরেই তৈরি হয়েছে এক সফল উদ্যোগ

কোদালিয়া গ্রামের বাড়িতেই রুপা খাতুন গড়ে তুলেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রেইনবো এগ্রো ফুড’। তার উদ্যোগ আজ শুধু নিজেকে নয়, আশপাশের মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১৮০০ কেজি প্রসেসিং কাঁঠাল সরবরাহ করেছেন প্রতিষ্ঠানকে, যা তার ব্যবসার বিস্তৃতি এবং সফলতার প্রতিফলন।

প্রশিক্ষণ ও সহায়তায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

রুপা খাতুন আজ যে জায়গায় পৌঁছেছেন, তাতে বড় ভূমিকা রেখেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘পার্টনার প্রোগ্রাম’। ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ’ (PARTNER-DAM) প্রকল্পের আওতায় তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রকল্পের অংশীদার প্রতিষ্ঠান প্রিজম হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটপ্রিজম এগ্রো এন্ড ফুড নিবিড়ভাবে কাজ করছে রুপা খাতুনসহ অন্যান্য নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে।

নারী উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেশজুড়ে অনুপ্রেরণা

প্রিজম এগ্রো এন্ড ফুড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসলিমা খাতুন বলেন, “রুপা খাতুন শুধু নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন না, বরং কাঁঠালের মতো অপ্রচলিত একটি ফল দিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোরের সিনিয়র কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, “রুপা খাতুনের মতো উদ্যোক্তারা আমাদের প্রমাণ দিচ্ছেন, নারী উদ্যোগ মানেই সম্ভবনার নতুন পথ। আমরা চাই, তার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে।”

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »