নিজের বিচারের দাবিতে যশোরে কলেজ শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচি

কলেজ শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচি যশোরে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিজের বিচারের দাবিতে ব্যানার ঝুলিয়ে শিক্ষক হাফিজুর রহমানের প্রতিবাদ।

যশোরের মণিরামপুরে এক কলেজ শিক্ষক নিজের বিচারের দাবিতে ব্যানার ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় এসেছেন। ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সম্মিলনী ডিগ্রি কলেজের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান।

অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে আধা ঘণ্টার মাথায় কলেজ অধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই শিক্ষককে অফিসে নিয়ে যান। এ ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সহকারী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেছেন, তাঁর দুই সহকর্মী—রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রুহুল কুদ্দুস টিটো এবং ভূগোল বিভাগের আব্দুস সালাম—কলেজের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে তাকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এসব মন্তব্য তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে এবং তিনি একসময় আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলেন। তবে পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজের বিচার চেয়ে কলেজ ফটকে অবস্থান করবেন।

হাফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি কলেজে নিয়মিত কমিটি গঠনের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধি (টিআর) নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তিনজন টিআর নির্বাচিত হবেন, আর এই নির্বাচনে তিনি একজন প্রার্থী। বর্তমান এডহক কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস টিটো ও আব্দুস সালামসহ মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

হাফিজুরের দাবি, অধিকাংশ শিক্ষক তাঁর পক্ষ নিয়েছেন। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কলেজের গ্রুপে তাকে নিয়ে কটূক্তি করেন।

অভিযুক্তদের কথাবার্তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হাফিজুর রহমান বলেন—“যদি আমি সত্যিই খারাপ মানুষ হই, তবে আমার বিচার হোক। তাই নিজের বিচার দাবিতে আমি কলেজের সামনে ব্যানার ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করেছি।”

তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ এসে তাকে অফিসে নিয়ে গিয়ে অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কারণে তিনি এখনো লিখিত অভিযোগ জমা দেননি।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রুহুল কুদ্দুস টিটো জানান, হাফিজুর রহমান নিজে থেকেই কলেজের নানা দায়িত্ব নিতে চান। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তাকে দায়িত্ব না দেওয়ায় তিনি বিরক্ত হন। এছাড়া নির্বাচনে ভোট না পেলে কিছু শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের প্রসঙ্গে টিটো বলেন—“আমরা শুধু মজা করে লিখেছিলাম, ‘হাফিজুর ভাই, আপনার চেহারা সুন্দর হচ্ছে কিন্তু আচরণ ভালো করা দরকার।’ এর বাইরে কোনো শিক্ষক তাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেননি।”

সম্মিলনী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ড. শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তিনি সরাসরি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি বলেন—

“হাফিজুর রহমান আমাকে জানান, দুই শিক্ষক তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। আমি তাকে বলেছি, প্রমাণসহ অভিযোগ লিখিতভাবে দিতে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

যশোরের মণিরামপুরে এই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বিরোধ পর্যন্ত সবকিছুই এই ঘটনার পেছনে জড়িত।

মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের আচরণ এবং শিক্ষক সমাজে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

নিজের বিচারের দাবিতে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন সত্যিই বিরল ঘটনা। বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত অভিযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষকদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মান বজায় রাখার গুরুত্বও সামনে নিয়ে এসেছে। এখন সবার দৃষ্টি কলেজ কর্তৃপক্ষের দিকে—তারা কীভাবে অভিযোগের সুরাহা করে পরিস্থিতি সামাল দেন, সেটিই দেখার বিষয়।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »