যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য ও দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার (৬৮) বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক ভিসি আব্দুস সাত্তার। কারা সূত্রে জানা গেছে, তিনি বুকে ব্যথা, মুখ দিয়ে লালা পড়া এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গে ভুগছিলেন। স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকায় দ্রুত তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর শরিফুল আলম বলেন, “সাবেক ভিসি সাত্তারের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত নন।”
হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার এবং কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাজ্জাদ হোসেন তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাফায়েত হোসাইন জানান, সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা গেছে তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে, যা স্ট্রোকের লক্ষণ বহন করছে।
তিনি আরও বলেন,
“রোগী এখনও সংকটমুক্ত নয়। তাঁর চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল সকালে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত হবে।”
হাসপাতালের পুরুষ পেয়িং ওয়ার্ডে একটি বিশেষ বেডে তাঁর চিকিৎসা চলছে, যেখানে একজন পুলিশ সদস্য ও দুইজন কারারক্ষী নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। ইতোমধ্যে নিকট আত্মীয়, যবিপ্রবির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা হাসপাতালে এসে তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছেন।
সাবেক ভিসির অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁর ছেলে ওয়াসিফ সাত্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ক্ষোভপূর্ণ পোস্ট দেন। তিনি লিখেন,
“যবিপ্রবির উপাচার্যের পদ গ্রহণের জন্য সত্তর বছর বয়সে আমার বাবাকে কারাগারে যেতে হলো। শারীরিক অবস্থার কথা আদালতে জানালেও জামিন দেওয়া হয়নি। অবশেষে তিনি কারাগারে স্ট্রোক করেছেন এবং গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।”
এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেকে তাঁর মুক্তির দাবি তুলেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন দুদকের দায়ের করা দুটি দুর্নীতি মামলায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে যান সাবেক ভিসি আব্দুস সাত্তার। অভিযোগে বলা হয়, তিনি অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং সরকারি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২০ আগস্ট নির্ধারিত রয়েছে।
সাবেক ভিসির অসুস্থতার ঘটনায় শিক্ষাঙ্গন ও স্থানীয় মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা ও জামিনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
যশোরের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় নাগরিক সমাজ দ্রুত সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।