“লাইভে চোখ খুলে দিলেন ফাতেমা খানম! চট্টগ্রামে নারীদের রাজনীতি কেন ধ্বংস হচ্ছে?”

নারী রাজনীতি চট্টগ্রাম নিয়ে ফাতেমা খানমের ফেসবুক লাইভ ও পদত্যাগের ঘোষণা, রাজনীতিতে নারীদের সংকটের গল্প পড়ুন।

ফেসবুক লাইভে আবেগঘন ঘোষণা

চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম আর কখনো রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রায় ১৬ মিনিটের এই লাইভে তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে চট্টগ্রামে নারী নেত্রীদের হেয় করতে ও রাজনীতি থেকে সরাতে সংগঠনের ভেতরের কিছু মানুষই নানা ষড়যন্ত্র করছেন।

‘নারীদের ধ্বংসের চেষ্টা চলছে’

লাইভে ফাতেমা খানম বলেন, যাঁদের সঙ্গে আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি, তারাই আজ মেয়েদের নিয়ে নানান বয়ান তৈরি করছেন, অপমান করছেন। নারীদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছেন, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি স্পষ্ট জানান, কিছু ভাই-ব্রাদারের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতির কাছে চট্টগ্রামের প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি হেরে গেছে।

নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ফাতেমা অভিযোগ করেন, কিছুসংখ্যক নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চট্টগ্রামে একটার পর একটা গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতি করেছেন। আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা হলেও বাস্তবে এখন লড়াই করতে হচ্ছে নিজের দলের মানুষের সাথেই। এই দ্বন্দ্বের কারণে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না বলে জানান তিনি।

‘মেয়েদের নিয়ে নোংরামি বন্ধ করুন’

লাইভে ফাতেমা খানম অনুরোধ করে বলেন, আপনারা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দয়া করে মেয়েদের নিয়ে নোংরামি বন্ধ করুন। চট্টগ্রামে এক সময় অনেক মেয়ে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, আজ তারা কেউ নেই। আজ আমাকে নিয়েও বাজে কথা বলা হচ্ছে, নতুন বয়ান তৈরি হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে যাতে তাকে মাইনাস করা যায়।

ফেসবুক পোস্টে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

লাইভের পর শনিবার ভোরে ফাতেমা খানম নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, রাজনীতির অঙ্গনে কখনো শূন্যতা থাকে না। আমি সরে দাঁড়ালেও কেউ না কেউ এই পথে হেঁটে আসবে। কিন্তু চট্টগ্রামের নারী রাজনীতিকদের ভবিষ্যনিয়ে আমি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন।’

তিনি স্পষ্ট করেন, রাজনীতির মাঠে নারীদের শুধুমাত্র প্রতিপক্ষ নয়, নিজেদের দলের লোকেরাই সহিংসতা ও ষড়যন্ত্র করে। এ কারণেই নারীদের রাজনীতি করতে গিয়ে অপমান ও হয়রানির শিকার হতে হয়।

অভিজ্ঞতার বেদনা প্রকাশ

চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা বলেন, একজন নারী যখন সব বাধা উপেক্ষা করে রাজনীতিতে আসে, তখন যদি নিজের দলের ভাইয়েরাই তাকে হেয় করে, তখন তার আর রাজনীতি করার মতো পরিবেশ থাকে না। এটি আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টের বিষয়।’

নেতৃত্বের দায় ও অবস্থান

চট্টগ্রামে ফাতেমার অভিযোগের বিষয়ে সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক আরিফ মইনুদ্দিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যারা পদ পাবেন না, তারা নানা অজুহাতে পদত্যাগ করছেন। ফাতেমার ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সম্প্রতি কিছু ফেসবুক পেজ থেকে চট্টগ্রামের নারী নেত্রীদের নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে, যা ফাতেমার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফাতেমাকে বহিষ্কার করা হলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত

গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব ইউনিটের কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ঢাকার শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ এ ঘোষণা দেন।

নারী রাজনীতিকদের জন্য অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

ফাতেমা খানমের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে চট্টগ্রামে নারীদের রাজনীতি করার পরিবেশ এখনো অনুকূল নয়। ফাতেমার মতো তরুণী যখন আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে থেকে নেতৃত্ব দেন, তখন তার উপরই নেমে আসে নোংরা রাজনীতি ও ব্যক্তি আক্রমণ।

তাঁর কথায় উঠে এসেছে নারী রাজনীতিকদের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ গড়ার দাবি। তবে কবে এই পরিবর্তন আসবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

উপসংহার: পরিবর্তনের প্রত্যাশা

ফাতেমা খানমের পদত্যাগ বার্তা কেবল তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি চট্টগ্রামের নারী রাজনীতির একটি কঠিন বাস্তবতাও তুলে ধরেছে। নারীদের জন্য রাজনীতির মাঠ নিরাপদ ও সম্মানজনক করতে না পারলে এই শূন্যস্থান পূরণ হবে না—এমনটাই মনে করছেন সচেতন সমাজ।

রাজনীতি হোক স্বচ্ছ, নেতৃত্ব হোক নৈতিক—এই প্রত্যাশাই এখন সাধারণ মানুষের।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »