চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে যা ঘটেছে

চন্দ্রনাথ মন্দির মসজিদ বিতর্ক ঘিরে ফেসবুক পোস্টে উত্তেজনা ছড়ায়। প্রশাসন জানায়, মন্দির এলাকায় কোনো মসজিদ নির্মাণের অনুমতি নেই।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত। এখানে অবস্থিত ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ মন্দির প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত ও পর্যটকের আগমনে মুখরিত থাকে। কিন্তু সম্প্রতি এই পবিত্র তীর্থস্থানকে ঘিরে শুরু হয়েছে এক নতুন বিতর্ক—মসজিদ নির্মাণের দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ঘিরে তোলপাড়।এ খবর বিবিসি বাংলা অনলাইনের।

ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্ট থেকে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে ওঠে এবং স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এরপর প্রশাসন, স্থানীয় কমিটি ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

১৫ আগস্ট ঢাকার এক ব্যবসায়ী এম এম সাইফুল ইসলাম চন্দ্রনাথ পাহাড় সফর শেষে তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেন—৯৩ শতাংশ মুসলমানের দেশে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির আছে, কিন্তু মসজিদ নেই কেন?”

পরবর্তীতে আরেকটি পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, পাহাড়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ না পাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং দাবি তোলেন যে, শিগগিরই সেখানে মসজিদ নির্মাণ করবেন

তারপর তিনি ধর্মীয় আলোচক ও হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজহারের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং উল্লেখ করেন, সীতাকুণ্ড পর্বতের চূড়ায় মসজিদ ৯০% কনফার্ম।”

এই ঘোষণার পরই সীতাকুণ্ডের স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। কারণ, চন্দ্রনাথ পাহাড় বহু শতাব্দী ধরে সনাতন ধর্মের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এখানে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক মন্দির, যেখানে প্রতিবছর শিবচতুর্দশী মেলাসহ নানা পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণের প্রচেষ্টা বা পোস্টগুলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে হিন্দু সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অসংখ্য প্রতিবাদী পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা হারুন ইজহার। যদিও তিনি দাবি করেন, সাইফুল ইসলাম তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন না এবং এই ঘটনার সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে অনেক প্রোপাগান্ডা চলছে। বাস্তবে এমন কোনো উদ্যোগ নেই।”

পরে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি জানান, কয়েকজন তরুণ আলেম তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। তারা মূলত মুসলিম পর্যটকদের জন্য ইকোপার্ক এলাকায় নামাজের উপযোগী স্থান নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, মন্দির এলাকায় নয়।

বিতর্ক যখন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, তখন উপজেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘোষণা দেন: চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই।একজন পর্যটকের ফেসবুক পোস্টের ভিত্তিতে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।প্রশাসন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করছে যে, মন্দির এলাকায় কোনো মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না

পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন সচেষ্ট।

চন্দ্রনাথ পাহাড় শুধু একটি পাহাড় নয়, এটি সনাতন ধর্মের জন্য এক অনন্য তীর্থক্ষেত্র।এখানে অবস্থিত চন্দ্রনাথ শিবমন্দির, যা উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির।স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, এখানে রাম সীতা স্নান করেছিলেন, সেখান থেকেই এলাকার নামকরণ হয় সীতাকুণ্ড।প্রতিবছর শিবচতুর্দশী মেলায় হাজার হাজার ভক্ত অংশগ্রহণ করেন, দেশ-বিদেশ থেকে সাধু-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে।মন্দির কমিটির দাবি অনুযায়ী, নেপালের এক রাজা অষ্টম শতাব্দীতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এমন একটি জায়গা হিন্দুদের জন্য শুধু ধর্মীয় নয়, বরং ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতীক

বাংলাদেশ একটি বহু-ধর্মীয় বহু-সাংস্কৃতিক দেশ, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের গৌরবের অংশ। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক সেই সম্প্রীতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

বর্তমানে প্রশাসন, স্থানীয় স্রাইন কমিটি ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এমন সংবেদনশীল বিষয়ে উসকানি দেওয়ার ঘটনা সমাজে ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এনেছে।

চন্দ্রনাথ পাহাড় শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায়ের অমূল্য ঐতিহ্য। প্রশাসনের আশ্বাস এবং স্থানীয় কমিটির দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করেছে যে, ধর্মীয় সহাবস্থান বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।

একজনের ভুল বা উসকানিমূলক পোস্ট সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, তাই এ ধরনের বিষয়কে কেন্দ্র করে সকলকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই—এটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে প্রশাসন ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

যশোর ক্রীড়া সংস্থায় কাজী এনামের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উত্তেজনা: ঘেরাও, স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঝড়

যশোর ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে...

সেলিব্রেটি গসিপ...

মেগান মার্কেলের উদ্বেগ: প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে রাজা চার্লসের মিলন ঘিরে নতুন বিতর্ক

প্রিন্স হ্যারি এ সপ্তাহে লন্ডনে ফিরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিচ্ছেন WellChild Awards-এ, তবে আড়ালে আলোচনার বিষয় হচ্ছে—তিনি কি তাঁর দূরত্ব তৈরি হওয়া বাবা, রাজা...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Translate »