বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বারবার নানান বিতর্কিত ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। তার মধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনার সূত্র ধরেই জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সম্প্রতি তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সংশ্লিষ্টদের। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন?” — এ প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে জাতির অজানা ক্ষোভ আর অনিশ্চয়তা।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার হুমকি
২০০৪ সালে চট্টগ্রামের কেরানীহাট এলাকায় ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার উপর ভয়ঙ্কর ছাপ ফেলেছিল। এই অস্ত্রগুলো কাদের জন্য, কোথায় যাবে—এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও পুরোপুরি জানা যায়নি। কিন্তু এই অস্ত্র আটক হওয়ায় বোঝা গেছে, দেশের ভেতর অস্ত্র পাচার চক্র কতটা সক্রিয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্র কতটা দুর্বল ছিল সেই সময়ে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর তীব্র ভাষার ব্যাখ্যা
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নেত্রকোনায় এক পথসভায় বলেন, “যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, আনলেন কেন?”—এতে স্পষ্ট হয়েছে, তিনি এ ঘটনার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের দায় এড়ানোর সুযোগ দিতে রাজি নন। লুৎফুজ্জামান বাবরকে তিনি সরাসরি ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, যদিও ব্যক্তিগতভাবে তাকে কারা নির্যাতিত নেতা বলে সম্মান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাবরের এই কর্মকাণ্ডই বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছে এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েমের সুযোগ দিয়েছে। ফলে গত ১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, অনেকে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র চোরাচালানের ভয়াবহ প্রভাব
১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও শঙ্কা ছড়ায়। এ অঞ্চলকে অস্থির করতে বহির্বিশ্বের নানা শক্তি বারবার হাত বাড়িয়েছে। নাসীরুদ্দীন বলেন, এই অস্ত্র পাচারের দায়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে, এবং এর দায় বাবরদের মতো নেতাদেরকেই নিতে হবে।
লুৎফুজ্জামান বাবর: নায়ক না খলনায়ক?
নাসীরুদ্দীন বাবরকে কারা নির্যাতিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তার ভূমিকা নিয়ে কোনো ছাড় দেননি। তিনি বলেন, বাবরের সিদ্ধান্তই বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত করেছে। এ কারণেই আজ বিএনপি ক্ষমতার বাইরে, আর শেখ হাসিনার দীর্ঘ একনায়কতন্ত্র চলছে। বাবরের এই অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে আজও দেশের সাধারণ মানুষ মানবাধিকার লঙ্ঘন আর বিচারহীনতার শিকার।
ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিরুদ্ধে নাসীরুদ্দীনের লড়াই
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট শাসন আর চায় না। এজন্য তিনি পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ নির্বাচন চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পাওয়ার ব্যালান্স না থাকায় এককেন্দ্রিক ক্ষমতা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
রাজপথেই বদল আনবে জনগণ
নাসীরুদ্দীন বলেন, “রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকুন, আমাদের নতুন সংবিধান, সংস্কার আর শেখ হাসিনার বিচারের টিকিট নিয়েই ঘরে ফিরতে হবে।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি রাজপথকেই পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ লড়াই অধিকার আর মর্যাদার।
বিডিআর হত্যা থেকে শাপলা চত্বর: সব হত্যার বিচার চান নাসীরুদ্দীন
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীর গুম-খুনের বিচার তিনি চান। তিনি স্পষ্টভাবে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের দোষারোপ করেন, যাদের কারণে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন হয়েছে, আলেমদের জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছে এবং পাহাড়িদের অত্যাচার করা হয়েছে।
দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা: জনগণের মধ্যে নতুন বার্তা
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি দেশের মানুষের মধ্যে নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। নেত্রকোনায় পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা শেরপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এই পদযাত্রা প্রমাণ করছে—বাংলাদেশে জনগণ এখন আর আগের মতো চুপচাপ বসে থাকবে না। মানুষ অধিকার আদায়ে রাজপথে নামতে প্রস্তুত।
শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ও নতুন বাংলাদেশ
নাসীরুদ্দীনের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট—শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের অবসান ছাড়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য তিনি জনগণকে শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব শাসক ক্ষমতার জন্য জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, তাদের ভোটের বাক্সে শাস্তি দিতে হবে।