আটলান্টিক মহাসাগরে গঠিত ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন এরিন একদিনের মধ্যেই রূপ নিয়েছে বিরল ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়ে। এই সুপার হ্যারিকেনের স্থায়ী বাতাসের গতি এখন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ মাইল বা প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়াবিদদের মতে, এরিন আরও শক্তিশালী হতে পারে এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইক ব্রেনান জানিয়েছেন, হ্যারিকেন এরিন রাতারাতি ‘অত্যন্ত শক্তিশালী ও তীব্র’ রূপ নিয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত এটি ছিল কেবল একটি ট্রপিক্যাল স্টর্ম। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঝড়টির গতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ঘণ্টায় ১৬০ মাইল। ব্রেনান সতর্ক করে বলেছেন, এটি দ্রুত গভীরতর রূপ নিচ্ছে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বর্তমানে হ্যারিকেন এরিন অবস্থান করছে ক্যারিবীয় সাগরে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, সপ্তাহান্তে এটি লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং পুয়ের্তো রিকোর উত্তর দিক ঘেঁষে অতিক্রম করবে। এতে সর্বোচ্চ ৬ ইঞ্চি (প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি করবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এটি ২০২৫ মৌসুমের প্রথম বড় হ্যারিকেন। যদিও আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা নেই, তবে এটি “র্যাপিড ইন্টেনসিফিকেশন” বা দ্রুত শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে ঘণ্টায় অন্তত ৩৪ মাইল বেশি বেগ অর্জন করেছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ঝড়টির গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ মাইল।
আগামী সপ্তাহে এরিন ধীরে ধীরে উত্তরমুখী হয়ে বাহামার পূর্ব উপকূল ঘেঁষে নর্থ ক্যারোলিনার আউটার ব্যাংকস অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পুরো পূর্ব উপকূলে এর প্রভাবে প্রাণঘাতী ঢেউ এবং বিপজ্জনক রিপ কারেন্ট তৈরি হবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক ঢেউ আঘাত হানতে পারে ফ্লোরিডা ও মধ্য–আটলান্টিক উপকূলে। এছাড়াও বারমুডা দ্বীপেও এর প্রভাবে ভয়াবহ ঢেউ ও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
গেল–ফোর্স বা প্রবল বাতাসের কারণে মার্কিন কোস্ট গার্ড ইতিমধ্যে সেন্ট থমাস, সেন্ট জন এবং পুয়ের্তো রিকোর ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে স্থানীয় ব্যবসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
মার্কিন ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) জানিয়েছে, এ বছর আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড় মৌসুম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্যাটাগরি–৪ ও ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার সুপার হ্যারিকেনের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
হ্যারিকেন এরিন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ভয়াবহ প্রভাব ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই উপকূলীয় জনগণকে এখনই সচেতন হতে হবে এবং জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
👉 সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, এরিন এখনো শক্তি সঞ্চয় করছে এবং যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।