ব্রিটেনে চিকিৎসাক্ষেত্রে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পাকিস্তানি চিকিৎসক সুহেল আঞ্জুম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অস্ত্রোপচার অসম্পূর্ণ রেখেই নার্সের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও তীব্র ক্ষোভ।
অভিযোগের বিস্তারিত ঘটনা
২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। জানা গেছে, ওই দিন সুহেল আঞ্জুমের পাঁচটি অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। এর মধ্যে তৃতীয় সার্জারি ছিল এক রোগীর গলব্লাডারের স্টোন অপসারণের। কিন্তু মাঝপথেই অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি পাশের কক্ষে চলে যান। অভিযোগ অনুযায়ী, সেখানে এক নার্সের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন তিনি।
অভিযোগ আরও গুরুতর হয় যখন অন্য এক নার্স হঠাৎ করেই ঘরে ঢুকে পড়েন। তিনি দেখেন, আঞ্জুমের হাত তখনও পাজামার দড়ি বাঁধছে এবং নার্সটির পোশাক হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতি দেখে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাসপাতালে।
চিকিৎসকের স্বীকারোক্তি ও অনুশোচনা
ঘটনার তদন্ত শুরু হলে ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থিত হয়ে সুহেল আঞ্জুম তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন। তিনি জানান,
“আমি লজ্জিত। ওই কাজের জন্য অনুতপ্ত। ভবিষ্যতে আর কখনোই এমন কিছু করব না।”
তবে একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, সেই ঘটনার অপরাধবোধ তাঁকে এখনো ভোগাচ্ছে।
চিকিৎসকের ব্যক্তিগত জীবনের সংকট
আঞ্জুম তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের দিকটিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, সেই সময়ে তাঁর দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তাঁদের একটি প্রিম্যাচিওর শিশু জন্ম নেওয়ায় স্ত্রী বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি আর্থিক চাপে ছুটির দিনেও একের পর এক অস্ত্রোপচার করায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। আর সেই পরিস্থিতিতেই নার্সটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বলে দাবি তাঁর।
ব্রিটেনে চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার
- ২০০৪ সালে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন করেন আঞ্জুম।
- ২০১১ সালে তিনি ব্রিটেনে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন।
- কিন্তু ২০২৩ সালের অভিযোগের পর ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েন।
- অবশেষে ২০২৪ সালে তিনি ব্রিটেন ছেড়ে চলে যান।
ব্রিটেনে তোলপাড় ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রশ্ন
এই ঘটনায় ব্রিটিশ স্বাস্থ্যব্যবস্থায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—
- কীভাবে একজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মতো গুরুতর দায়িত্ব মাঝপথে ফেলে রাখতে পারেন?
- হাসপাতালের প্রশাসন কেন এতদিন এই বিষয়টি চেপে রেখেছিল?
- রোগীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কেন বরদাস্ত করা হলো?
ট্রাইব্যুনালের রায় ও ভবিষ্যৎ
সুহেল আঞ্জুম অপরাধ স্বীকার করলেও তাঁর ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পেশায় ফেরা অনিশ্চিত। তিনি অনুরোধ করেছেন, যদি আবার ব্রিটেনে কাজের সুযোগ দেওয়া হয় তবে আর কখনোই এমন অপরাধ করবেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনার কারণে চিকিৎসা পেশার সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।