সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে হস্তক্ষেপ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্কটল্যান্ডে নিজের ব্যক্তিগত গলফ রিসোর্ট থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং তারা শান্তি আলোচনায় সম্মত হয়েছেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে নতুন করে আন্তর্জাতিক নজর পড়েছে এই দ্বন্দ্বে। তিনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “উভয় দেশ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।”
থাইল্যান্ডের প্রতিক্রিয়া: শান্তি চাই, কিন্তু চাই আন্তরিকতার প্রমাণ
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইও ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,
“আমরা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত, তবে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিকতার প্রতিফলন দেখতে চাই।”
এমন মন্তব্যে বোঝা যায়, দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের দেয়াল এখনো অটুট।
সংঘর্ষের পটভূমি: প্রাণহানি, বাস্তুচ্যুতি এবং উত্তেজনার আগুন
২৪ জুলাই থেকে সীমান্তে গোলাগুলি শুরু হলে কমপক্ষে ৩৩ জন সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই অবস্থায় ট্রাম্প বলেন,
“সংঘাত চললে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।”
তবে তিনি আশাবাদী, শান্তি ফিরে এলে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ফের চাঙ্গা হবে।
আসছে আমদানি শুল্ক, তার আগেই ট্রাম্পের বিবৃতি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা
আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ কর আরোপের কথা রয়েছে। তার আগেই ট্রাম্পের এই বিবৃতি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনায় যুক্ত হলেন কীভাবে? কারণ একদিন আগেই থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়ামপংসা জানিয়েছিলেন,
“এই মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতা প্রয়োজন নেই।”
কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব, মধ্যস্থতায় আগ্রহ মালয়েশিয়ার
এই টানটান পরিস্থিতির মাঝেই কম্বোডিয়া সরকার ‘শর্তহীন অস্ত্রবিরতির’ প্রস্তাব দিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ইতিমধ্যেই মধ্যস্থতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পও দাবি করেছেন, তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথামের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়,
“যখন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, আমি দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে মুখিয়ে আছি।”
কে দায়ী সংঘর্ষের জন্য? দোষারোপ চলছে দুই দেশেই
দুই দেশই একে অপরকে সংঘর্ষের জন্য পরস্পরের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
থাইল্যান্ডের অভিযোগ, কম্বোডিয়া ড্রোন দিয়ে সীমান্তে নজরদারি শুরু করে, যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার পাল্টা দাবি, থাই সেনারা পূর্ববর্তী একটি চুক্তি লঙ্ঘন করে এক প্রাচীন খেমার-হিন্দু মন্দির এলাকায় প্রবেশ করে, যার ফলে গোলাগুলির সূচনা হয়।
ঐতিহাসিক বিরোধ: শতাব্দী পুরোনো সীমান্ত সমস্যা
এই দ্বন্দ্বের মূল রয়েছে ঔপনিবেশিক আমলে। ফরাসি উপনিবেশিক আমলে সীমানা নির্ধারণ ঘিরে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, তারই রেশ রয়ে গেছে আজও। এই সীমানা বিরোধ ঘিরেই বারবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের সম্পর্ক।
উপসংহার: শান্তির সুযোগ না কি রাজনৈতিক কৌশল?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হস্তক্ষেপকে অনেকে একটি শান্তির প্রয়াস বললেও, অনেকে একে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখছেন— বিশেষ করে মার্কিন আমদানি নীতির আলোকে। তবে বাস্তবতা হলো, দুই দেশের মাঝে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
আন্তর্জাতিক সমাজের ভূমিকা, দুই দেশের আন্তরিকতা এবং ঐতিহাসিক সমস্যার দূরদর্শী সমাধানই কেবল এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে।