গুলিই নয়, পা দিয়ে মাড়িয়ে অনেককে হত্যা করা হয়

No shots were fired, and many were killed

- Advertisement -

প্রতিদিনের মতেই সেদিন ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের বেশাইনখান গ্রামের মানুষ দিনটি শুরু করতে চেয়েছিল আর দশটা দিনেও মতোই। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে তাদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ বিভীষিকা।

১৯৭১ সালের ২০ জুন। স্থানীয় রাজাকারদের খবরের ভিত্তিতে গ্রামের এক দিকের ধানক্ষেত বাদে বাকি তিন দিকের রাস্তা ও খাল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা ঘিরে ফেলে।

গভীর রাতে তারা গ্রাম ঘেরাও করা শুরু করে। সকাল হতেই গ্রামটি চারদিক থেকে বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে ফেলে। ফলে গ্রাম থেকে মানুষ তো দূরের কথা কোনো প্রাণির পক্ষেও বের হওয়া সম্ভব ছিল না।

এ অবস্থায় আশ্রয় নেয়া হিন্দু ধর্মের বহু মানুষ মারা যেতে পারে ভেবে গ্রামের লোকজন সামনে এগিয়ে আসে। সে সময় পাকিস্তানি বাহিনী সংশ্লিষ্ট ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী পেয়ারা বাগান কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়।

নির্দেশনা অনুযায়ী পেয়ারা বাগান কাটার জন্য গ্রামের প্রায় ১০০-১৫০ জন পুরুষ দা-কাঁচি নিয়ে বের হয়ে গ্রামের সামনের দিকে স্কুলমাঠে উপস্থিত হয়। তখন তাদের সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।

সবাইকে বাঁধার পর গ্রামের আর কোনো পুরুষ বাকি আছে কি না দেখতে কিছু সংখ্যক আর্মি গ্রামে ঢোকেন। যারা ছিলেন তাদের অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। হিন্দুরা গণহত্যার আগেই গ্রাম ত্যাগ করেছিলেন। যারা গ্রামে ছিলেন তারা প্রাণ বাঁচাতে কচুরিপানার নিচে লুকিয়েছিলেন।

পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার ও লুটেরা বাহিনী গ্রামে ঢুকে ব্যাপক লুটতরাজ করে। অন্যদিকে, রাশেদ আলী, প্রাইমারি স্কুল মাস্টার আবু বকর, সালাউদ্দিন মজনুসহ কয়েকজনকে পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে আসে এবং গুলি করে হত্যা করে।

পরবর্তী সময়ে আটক শতাধিক মানুষকে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী পেটানো শুরু করে। পেটাতে পেটাতে যারা মুমূর্ষু হয়ে পড়েন তাদের গুলি করে হত্যার পর বটতলা খালের মধ্যে ফেলে দেয়।

বাকিদের দড়ি দিয়ে বেঁধে নৌকায় তুলে কুড়িয়ানা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে কুড়িয়ানা হাইস্কুলের বড় একটি কক্ষে রাখা হয়। এরপর সন্ধ্যায় একজন কক্ষের সামনে এসে ইশারায় যত লোক ছিলেন তাদের দুই ভাগে ভাগ করতে বলে।

তার নির্দেশে একজন একজন করে তার সামনে নিয়ে আসত এবং তার নির্দেশেই আলাদা সারিতে রাখা হতো। এভাবে এক পাশে রাখা হয় মানিক বাহিনীর সদস্য ও যারা মুক্তিযোদ্ধা হবার যোগ্য- এমন লোকজন এবং অন্য পাশে সাধারণ মানুষ। এভাবে এক পাশে প্রায় ১০ জন আর বাকিদের অন্য পাশে রাখা হয়।

প্রাথমিকভাবে কাউকে মুক্তি দেয়া হয়নি। এভাবেই দুই ভাগে তাদের ঝালকাঠি থানায় নিয়ে এসে থানা হাজতের উত্তরের কক্ষে রাখা হয়। দক্ষিণের কক্ষে রাখা হয় মানিক-রতনসহ বাকিদের।

এ অবস্থায় পরদিন সকালে থানার ওসি বদরুদ্দিন কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ছিলেন সলিম উদ্দিন মিয়া, ওসি বদরুদ্দিন ও এসআই শাহ আলম। তারা নানা প্রশ্ন করেন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য বের করার চেষ্টা করেন।

অমানুষিক শারীরিক অত্যাচার চালিয়ে কারো মুখ থেকে একটি কথাও বের করা যায়নি। পরে কেউ কেউ মুক্তি পান। মানিককেও তারা নানা প্রশ্ন করে। মানিকসহ আরো ৭ জন পাকিস্তানি বাহিনীকে কোনো তথ্য না দেয়ায় ৫টার দিকে থানা থেকে বের করে ঝালকাঠি পৌরসভার কাছে ডিপোর খোয়াঘাটে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এভাবে বেশাইনখান থেকে আটককৃতদের মধ্যে ১৩ জনকে ঝালকাঠি পৌরসভার খেয়াঘাটে হত্যা করা হয়। জানা যায়, মানিকের বুকে গুলির জবাবে তিনি তিনবারে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে লুটিয়ে পড়েন। গণহত্যার দিন পার্শ্ববর্তী সিংহপুরের পাটখেতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বহু নারীর ওপর নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি বাহিনী।

গ্রামের ভেতরের লাশগুলোর কোনোটির ছিল মাথা ফাটানো, কোনোটির বুকের পাঁজর ছিল না। শুধু গুলিই নয়, পা দিয়ে মাড়িয়ে অনেককে হত্যা করা হয় সেদিন। লুটপাটের পাশাপাশি চলে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাবার পর গ্রামের মহিলারা স্বজনদের খুঁজতে থাকেন।

গবেষক মুনিরা জাহান সুমি বেশাইখান গণহত্যা নিয়ে মাঠপর্যায়ে গবেষণা করেছেন; তাঁর ‘বেশাইখান গণহত্যা’ গবেষণাগ্রন্থটি ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক: উপপরিচালক, গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র, খুলনা

কৃতজ্ঞতা: গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

রিঙ্কুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ পর্নতারকা!

রবিবার আইপিএলের ম্যাচে আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিঙ্কু সিংহের হাত ধরে। শেষ ওভারে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২৯ রান...

সেলিব্রেটি গসিপ...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a Reply