বিপ্লবী কৃষ্ণবিনোদ রায় যশোরের রাজনৈতিক আন্দোলনে এক ইতিহাস…

Revolutionary Krishna Binod Roy is a history in the political movement of Jessore ...

- Advertisement -

স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে সেই হওয়া তাঁর গায়ে লাগে। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর সহজাত তীক্ষèবুদ্ধি এবং নেতৃত্ব সুলভ গুণাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে যশোরে অনুশীলন সমিতির সেই সময়ের সংগঠক অতুলকৃষ্ণ ঘোষের দৃষ্টি তাঁর উপর পড়ে।

তিনি হলেন কৃষ্ণবিনোদ রায়। বাড়ি যশোর যশোর শহরের উপকন্ঠ ঝুমঝুমপুরে। জন্ম ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে। যশোরে ইংরেজ পুলিশ অফিসার এলিসন তাঁর সাংগঠিক শক্তির কারণে শত্রু মনে করত।

কিন্তু এসব কিছুই পাত্তা দিতেন না কৃষ্ণবিনোদ রায়। রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে বাঁধা দিত এলিসন। ধরে নিয়ে কৃষ্ণবিনোদ রায়কে প্রহারও করেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তা।


কৃষ্ণবিনোদ রায়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় এই ভাবেই। নানা বাধাবিঘœ সত্ত্বেও কৃষ্ণবিনোদ কৃতিত্বের সাথে বিএ ও আইন পরীক্ষা পাশ করেন।

ইতোমধ্যে অতৃলকৃষ্ণের প্রেরণায় খুলনার প্রমথ ভৌমিক, নির্মল দাস প্রমুখদের সঙ্গে যশোর খুলনার যুবক সমিতি(পরে যুব সংঘ) গঠন করেন।

এক সময় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং যশোর জেলা কংগ্রেসের অন্যতম নেতারুপে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁদের কার্যক্রম সম্পর্কে পুলিশের গুরুতর আশঙ্কা জন্মায়। তাই তারা মিথ্যা বোমা মামলায় দলবল সমেত তাঁকে গ্রেফতার করে অন্তরীণ রাখে।

দুই বছর পর মুক্তি মেলে এবং পারিবারিকভাবে ভীষণ বিব্রত হয়ে পড়েন। পরে তিনি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ও যুব সংঘের কয়েকজন যোগদেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। যশোর ও খুলনায় আলাদা কমিটি গঠিত হয়।

দুই জেলার কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার জোর দেয়া হয় এবং তাঁর চেষ্টায় প্রসিদ্ধ মুসলিম নেতা সৈয়দ নওসের আলী ও নমশুদ্র সমাজের নেতা রসিকলাল বিশ^াস তাঁদের সহকর্মীদের নিয়ে কৃষক সমিতিতে যোগ দেন।

কৃষক সমিতি এই অঞ্চলে বৃহৎ সংগঠনে পরিনত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে কৃষ্ণ বিনোদ রায় আইন ব্যবসা ত্যাগ করে সর্বক্ষণের কর্মী হন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ ভাগ হলে কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং ৬ বছর কারাগারে আটক থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পারিবারিক দুরবস্থার কারণে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান এবং আইন ব্যবসা শুরু করেন।

অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানায় এবং পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপে ঐতিহাসিক কৃষক সংগ্রামের দুই বীর নায়ক জয়পাল সিং(পদস্থ সামরিক অফিসার যাঁর প্রধান সেনাপতি হবার কথা ছিল) এবং কংসারি হালদারের মৃত্যুদান্ডের বিরুদ্ধে তিনি আসামীপক্ষ সমর্থন করেন ও তাদের বেকসুর মুক্তির ব্যবস্থা করেন।


এবার একটু পিছনে ফিরে দেখি, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধীজীর নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে যশোর-খুলনার মানুষও এই গণসংগ্রামে বিপুলভাবেই সাড়া দেয়। ইংরেজ সরকার চুপ করে থাকে না, তারা নির্মম দমন ও সন্ত্রাসের যাবতীয় অস্ত্র মুক্ত করে দেয়।


এ সময় যশোরে কংগ্রেসের বড় নেতা বিজয় রায়ের অকাল মৃত্যুর পর বিশিষ্ট ব্যক্তি চন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা: জীবনরতন ধর, হরিপদ ভট্টাচার্য কংগ্রেসের হাল ধরেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ^াসী যুবসংঘের নেতা কৃষ্ণবিনোদ রায় ও তাঁর দলের সহযোগিতা গ্রহণ করেন।

যশোরে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ কর্মকর্তা এলিসন জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রবীণ নেতা চন্দ্র কুমার বন্দ্যোপাধ্যয়েকে গ্রেফতার করে। প্রকাশ্যে তাঁর হাতে হাতকড়া, কোমরে দড়ি পরিয়ে বিস্মিত ও ক্ষুদ্ধ জনসাধারণের সামনে দিয়ে হাঁটিয়ে থানায় নিয়ে যায়।

একই ভাবে গ্রেফতার করে নড়াইলের লোহাগড়ার কংগ্রেস নেতা কবিরাজ নলিনী মোহন সেন, আউড়িয়ার প্রবীণ অধ্যাপক অমৃত লাল রায়, মাগুরার প্রমথ ভৌমিক(পানু বাবু)কে।

এতে সাধারণ মানুষের ইংরেজদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। হাটে-বাজারে পুলিশের কাছে জিনিষ বেচা বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশও প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে নানান চক্রান্ত করতে থাকে।


এসময় একদিন রাতে কৃষ্ণবিনোদ রায়ের বাড়িতে তল্লাশির ছলে তাঁকে গ্রেফতার ও প্রহার করে। একই ভাবে যশোর শহরে অভিযান চালানো হয় কংগ্রেস নেতা অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ, প্রমথ জোয়ারদার, গোবিন্দ কুন্ডু, নিমাই মিত্র, মহীন্দ্র বসু প্রমুখের বাসায়।

তাদের ধরে নিয়ে গেলেও পড়ে ছেড়ে দেয়া হয়। শুধু ছাড়া পায় না কৃষ্ণবিনোদ রায়। পুলিশ অফিসার এলিসনের কাজ ছিল রাতে কংগ্রেসের স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদের বাড়িতে হানা দেয়া এবং নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করা।

অবশ্য এলিসন তার এই কুকর্মের পুরষ্কার পেয়েছিল যশোর থেকে কুমিল্লায় বদলী হয়ে। সেখানে শৈলেশ রায় নামের এক গুপ্ত বিপ্লবীর গুলিতে মারাত্মক আহত হয় এবং কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে মারা যায়।

মৃত্যুর পূর্বে সে জবানবন্দীতে বলেছিল, সম্ভবত যশোরের বিপ্লবীরাই তাকে মেরেছে। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট এই বিপ্লবী কলকাতায় পরলোকগমন করেন।

লেখক: সাজেদ রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক, যশোর।

লেটেস্ট আপডেট...

আইপিএল স্পেশাল...

রিঙ্কুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ পর্নতারকা!

রবিবার আইপিএলের ম্যাচে আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিঙ্কু সিংহের হাত ধরে। শেষ ওভারে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২৯ রান...

সেলিব্রেটি গসিপ...

সম্পর্কিত আরও পড়ুন...

Leave a Reply