শতবর্ষ আগে যে পুলিশ অফিসারের নামে জনগণ কাঁপত, তাকেই গুলি করে মেরেছিলেন বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত। কিশোর বিপ্লবীর মৃত্যুদণ্ড হয়। ১১১ বছর আগের এক একুশে ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহাসিক দিন। স্থান জলপাইগুড়ি।
শহিদ বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন একই দিনে হয় জেলায়। দিনটি উপলক্ষে শহিদ বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ ভবন প্রাঙ্গনে থাকা তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান শহরের বিশিষ্টজনেরা। উপস্থিত ছিলেন রণগোপাল ভট্টাচার্য, সলিল আচার্য্য, গোবিন্দ রায়, প্রদীপ দে সহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরা।
বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত ছিলেন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় শহীদ বিপ্লবী। ১৮৮৯ সালের ২০ শে জুন ঢাকায় তাঁর জন্ম। তিনি বিপ্লবী কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম তদন্তকারী ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ সামশুল আলমকে গুলি করে মারেন বীরেন্দ্রনাথ।
১৯০৯ সালের ৬ই মে আলিপুর মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত সহ বহু বিপ্লবী দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে যতীন্দ্রনাথ তার প্রিয় শিষ্য বীরেন্দ্রর কাঁধে সামশুল আলমের হত্যার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
১৯১০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা হাইকোর্টের বারান্দায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে বীরেন্দ্র গুলি করেন সামশুল আলমকে। গুলি করতে করতে আদালত চত্বর থেকে পালাতে চেষ্টা করেন তিনি।
রিভলবারের গুলি ফুরিয়ে যাওয়ার পর আদালতের রক্ষীরা তাঁকে ধরে ফেলে। পুলিশি জেরায় তিনি কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করেননি। এমনকি হাইকোর্টে বিচার চলাকালীন আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো উকিলের সাহায্য নিতেও তিনি অস্বীকার করেন। বিচারে বীরেন্দ্রকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
১৯১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে জলপাইগুড়ির প্রথম শহীদ বলা হয় বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্তকে। দিনটি জলপাইগুড়ি জেলায় বিশেষ মর্যাদা সহকারে পালিত হয়।
বন্দি থাকার সময় গোয়েন্দা বিভাগের ছলাকলায় কিশোর বিপ্লবীর কিছু মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। তবে সেই বিতর্ক থেকে পরবর্তী সময়ে কোনও ফায়দা তুলতে পারেনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগ।